সালেহ্ বিপ্লব: [২] শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ ভুল ছিলো। বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বিরের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস দাবি করেছেন, তখন সেনাসমর্থিত সরকারের অনুরোধের পরও তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেননি। পরবর্তীতে সবার অনুরোধে নাগরিক শক্তি নামের একটি রাজনৈতিক দল খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্যোগটি শুরুর পর দশ সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সেখান থেকে সরে আসেন। 

[৩] ড. ইউনূস বলেন, আমার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। অনেক সময় ব্যয় করতে হয় আইনি লড়াইয়ে। এর প্রভাবে ব্যক্তিগত জীবনে সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। আমার স্ত্রী একজন ডিমেনশিয়া রোগী। সে আমাকে ছাড়া কাউকেই চিনতে পারে না। তার দেখাশোনার দায়িত্ব সব আমার। এ অবস্থায় জেলে থাকতে হলে আমার স্ত্রীর কী অবস্থা দাঁড়াবে? আমি কোন প্ল্যান-গ্রোগ্রাম করতে পারছি না। আমি এবং আমার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার জন্য এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে।

[৪] ২০০৬ সালে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল। সেই নোবেল বিজয়ী একটি প্রতিষ্ঠান ও নোবেলজয়ী একজন ব্যক্তির মধ্যে বৈরি সম্পর্ক কেন হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এটা অদ্ভুত একটা বিষয় না? কী গভীর সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিলো। এখন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে জঙ্গিভাবে হামলা করতে আসছে। কেন এমন হচ্ছে?

[৫] প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা নাকি রক্তচোষা। ঠিক আছে আমরা না হয় রক্তচোষা। যখন আমরা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ শুরু করেছি তখন লোকে বলতো আমরা রক্তচোষা। এখন তো এই ব্যবসা সবাই করছে। সরকারও করছে। সরকার টাকা দিচ্ছে। সরকার নিয়ম নীতি করে দিচ্ছে। এখন কে কার রক্ত চুষছে?

[৬] তিনি বলেন, আমাকে বহুবার সুদখোর বলা হয়েছে। খুব কষ্ট লাগে। যে লোকটা বাংলাদেশের জন্য নোবেল পুরস্কার এনে দিলো, তাকে নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী এমন হেলা করবে, অপমান করবে এটা তো কারো ভালো লাগার কথা না। এটাতে দেশের মানুষেরও ভালো লাগার কথা না।

[৭] নির্বাচনের পর সরকার গঠন হলেও অধ্যাপক ইউনূস মনে করেন দেশে এখনও গণতন্ত্র নিয়ে এক ধরনের সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখন গণতন্ত্রহীন অবস্থায় আছি। আমি ভোট দেই নাই। অনেকেই ভোট দেয় নাই। আমি তো ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। অনেকে পারে নাই। ভোট যদি আমি না দেই। অংশগ্রহণ যদি না করতে পারি। তাহলে সেটা কোন গণতন্ত্র?

[৮] তিনি বলেন, গণতন্ত্র শুধু মুখে বললেই হবে না। আমি যদি ভোটটা দিতে পারতাম, তাহলে তো আমি বলতে পারতাম এটাই ঠিক। আমাকে তো কাউকে পাশ করার জন্য চয়েস দেয়া হয় নি। তাহলে এটা কীসের গণতন্ত্র?”

[৯] পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, আমার বাধা দেয়ার তো কোনো কারণ নাই। দেশের মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সাথে আমার কোনও যোগাযোগ হয়নি। সম্পাদনা: ইকবাল খান